বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট উদ্যান ও বড় দিঘি
দিনাজপুরের রামসাগর
বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট জাতীয় উদ্যান এবং সবচেয়ে বড় দিঘি রামসাগরই হচ্ছে দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যান। উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর জেলা শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে আউলিয়াপুর ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামে অবস্থিত এ জাতীয় উদ্যানটি। উদ্যানটি ঘুরে এসে সেই কাহিনী জানাচ্ছেন দৈনিক রূপসী বাংলা পত্রিকার তিতাস প্রতিনিধি নাজমুল করিম ফারুক
১৭৫০-৫৫ সালের কথা। এই সময়ে এ অঞ্চলে প্রচণ্ড খরা আর দুর্ভি চলছিল। রাজা রামনাথ প্রজাদের সেচ সুবিধা, জনকষ্ট দূরীকরণ আর খাদ্যাভাব পূরণের জন্য কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে তখনকার প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা ব্যয়ে এ দিঘি খনন করেন এবং নিজের নামেই এর নামকরণ করেন। তথ্য বিবরণীতে জানা যায়, রামসাগর জাতীয় উদ্যানের আয়তন প্রায় ২৭ হেক্টর। যার মধ্যে মূল দিঘির দৈর্ঘ্য ১০৩১ মিটার আর প্রস্থ ৩৬৪ মিটার। রামসাগর দিঘি উত্তর-দেিণ লম্বা আকৃতির। দিঘিটির উত্তরের দিকটি অপোকৃত বেশি গভীর। বেশ কয়েকটি পাকা ঘাট থাকলেও প্রধান ঘাটটি পশ্চিম পাড়ের ঠিক মাঝ বরাবর। প্রায় ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬০ ফুট প্রস্থ এ ঘাটটি। দিঘির উত্তর, দণি ও পূর্বপাশেও একটি করে ছোট ঘাট রয়েছে। দিঘিটির চারপাশে গাছে গাছে ঢাকা ইট বাঁধানো পথ আর ছোট ছোট কয়েকটি টিলা। রামসাগর দিঘির পশ্চিম পাশে ছোট একটি চিড়িয়াখানা আছে। চিড়িয়াখানায় কিছু কিছু প্রাণির অস্তিত্ব থাকলেও আগত দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য স্থাপন করা হয়েছে কৃত্রিম বিভিন্ন জীব জন্তুর প্রতিকৃতি। এখানে বেড়াতে আসলে নানা রকম গাছপালা পাশাপাশি এ উদ্যানে দেখা মেলবে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। বিশেষ করে শীত মৌসুমে এখানে প্রচুর অতিথি পাখির আগমন ঘটে।
১৯৬০ সালে রামসাগর দিঘিটি বনবিভাগের তত্ত্বাবধানে আসে। ১৯৯৫-৯৬ সালে সরকার এটিকে একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলেন এবং ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল রামসাগর এলাকাকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে রামসাগর জাতীয় উদ্যান। নির্দিষ্ট মূল্য পরিশোধ করে এখানে প্রবেশ করা যায়। নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করে গাড়ী নিয়েও এখানে ঘুরে আসতে পারেন। নিজস্ব পরিবহন না থাকলে দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ১৫০-২০০ টাকায় ব্যাটারী চালিত রিক্সায় রামসাগর পৌছতে পারবেন। সময় লাগবে প্রায় ৩০ মিনিট।
কীভাবে যাবেন ঃ ঢাকা থেকে দিনাজপুরগামী বাসগুলো সাধারণত ছাড়ে গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে। এসি- নন এসি বাস পাওয়া যায়। এসির ভাড়া ৯০০-১০০০ টাকা হলেও নন এসি বাসে ভাড়া পড়বে ৫০০-৬০০ টাকা। নাবিল, হানিফ, এসআর, কেয়া, এসএ, শ্যামলী পরিবহনের যাতায়াত করা যায়। তবে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আন্তঃনগর ট্রেন দ্রুতযান এক্সপ্রেস ও একতা এক্সপ্রেস দিয়েও যেতে পারবেন এবং ঢাকায় ফিরতে পারবেন। তবে এ দুটি সার্ভিস সপ্তাহে ২ দিন করে বন্ধ থাকে।
কোথায় থাকবেন ঃ রামসাগরে বনবিভাগের একটি বিশ্রামাগার থাকলেও সাধারণ পর্যটকদের সেখানে থাকার ব্যবস্থা নেই। রামসাগর ভ্রমণে গেলে তাই থাকতে হবে দিনাজপুর শহরে। দিনাজপুর শহরে থাকার জন্য ভালো মানের হোটেল হচ্ছে পর্যটন মোটেল। এছাড়াও শহরের মালদহ পট্টিতে হোটেল ডায়মন্ড, নিমতলায় হোটেল আল রশিদ, হোটেল নবীন, হোটেল রেহানা ও নিউ হোটেলে থাকতে পারেন।
No comments:
Post a Comment