Saturday, September 17, 2016

সাত পাহাড়ের মুখখ্যাত জল পাহাড় পাথরের বিছানাকান্দি

নাজমুল করিম ফারুক
পাথর, পানি, পাহাড় আর আকাশ নিয়েই যেন বিছানাকান্দি। এখানে আসার পর যে কথাটি সর্বপ্রথম মনে হয় তা হল প্রশান্তি। এই প্রশান্তিটুকু নিমিষেই ভুলিয়ে দেয় প্রতিদিনকার শত গ্লানি। বিছানাকান্দির প্রকৃতির সৌন্দর্যের কাছে যেন হার মানতেই হয় নাগরীক সভ্যতাকে। আর এই চরম সত্যটুকু উপলব্ধি করতে হলে আপনাকে চলে আসতে হবে বিছানাকান্দিতে। 
মায়াবী অপূরুপা স্বচ্ছজল আর পাথরের বিছানাকান্দি।
বিছানাকান্দির আরেক নাম সাত পাহাড়ের মুখ। কারণ এখানে দাঁড়িয়ে একসাথে দেখা যায় মেঘালয় রাজ্যের সাতটি পাহাড়ের মুখ। স্বচ্ছ জলধারা পাহাড়ের গা বেয়ে ছোট বড় পাথর ডিঙ্গিয়ে এসে পড়ে পিয়াইন নদীতে। বাংলাদেশের শত কর্ম ব্যস্ততা, আকাশ, নদী, ঘর-বাড়ি আর ফসলী জমিকে পেছনে ফেলে আপনি যতটা না এগিয়ে যাবেন শেষ সীমান্তের দর্শনে ততটা এগিয়ে আসবে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের হাতছানি। শিল্পীর তুলির মতো আঁকা পাহাড়গুলো থেকে বেয়ে পড়া স্বচ্ছ পানির ঝরনা আপনাকে মুগ্ধ করবে আর দু'চোখের মাঝে স্পষ্ট হয়ে ধরা দেবে পাশাপাশি অবস্থান করা সাতটি পাহাড়।
দেশের সীমানার গন্ডি পেরিয়ে দূরে আকাশের গায়ে সাতপাহাড়ের মুখ।
সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত সীমান্ত এলাকা রোস্তমপুরই বিছানাকান্দি। হাদারপাড় বাজার থেকে বর্ষা মৌসুমে নৌকা আর শুষ্ক মৌসুমে হেঁটে যেতে হয় বিছানাকান্দি। দেশের যেকোন স্থান থেকে আপনাকে প্রথমে আসবে হবে সিলেট শহরে। তারপর আম্বরখানা থেকে সিএনজি/মাইক্রো ভাড়া করে বিমানবন্দরের রাস্তা ধরে হাদারপাড় হাইস্কুলের মোড় হয়ে হাদারপাড় বাজারে আসতে হয়। এটিই সিলেট থেকে বিছানাকান্দি আসার মূল সড়ক। বর্তমানে এ রাস্তাটির অবস্থা এতই নাজুক যে বলে শেষ করা যাবে না। তবে সিলেট-জাফলং সড়ক দিয়েও বিছানাকান্দি যাওয়া যায়। এ রাস্তাটি চলাচলের উপযোগী ও আরামদায়ক। এেেত্র আপনাকে গোয়ানঘাট বাইপাস নতুন বাস স্টেশন হয়ে হাদারপাড় হাইস্কুলের মোড় অতঃপর হাদারপাড় বাজার। হাদারপাড় বাজার থেকে বর্ষা মৌসুমে ট্রলার দিয়ে পিয়াইন নদী হয়ে আপনাকে বিছনাকান্দি পৌছতে হবে আর শুষ্ক মৌসুমে ট্রলারের পরিবর্তে মোটরসাইকেল এবং পা একমাত্র সম্ভল।      
স্বচ্ছ পানি আমাকে করেছে মুগ্ধ গা না ভিজালে দেহ হবে না শান্ত।
  তবে নৌকা করে বিছানাকান্দি আসার পুরো পথটা অসম্ভব রোমাঞ্চকর। স্বচ্ছ আর ঠাণ্ডা পানি ঠেলে নৌকার এঁকেবেঁকে বয়ে চলা মনে এনে দেয় অদ্ভুত প্রশান্তি। তার উপর বাড়তি পাওনা হিসেবে তো আছে আশেপাশের গগনচুম্বী পাহাড় আর মাথার উপর শুভ্র শান্ত আকাশের আবরণ। পথ যত কমতে থাকে অস্পষ্ট পাহাড়গুলো স্পষ্ট নিরেট আকার নিতে থাকে আর তখন মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকতে হয়। যেন কোন শিল্পীর আঁকা ছবির মত এ দৃশ্য, প্রতিটি খাঁজে রয়েছে অপার সৌন্দর্য আর নিখুঁত কারুকার্যের নিদর্শন। যাওয়া বা আসার পথে পিয়াইন নদীতে দেখা মিলবে পাথর উত্তোলনকারীদের। নদী থেকে পাথর উত্তোলন, নৌকা করে গন্তব্যে পৌছা এক বাড়তি অভিজ্ঞতা। এমনি করে চলতে চলতে কখন যে পথ শেষ হয়ে আসে তা বলা মুশকিল। কিন্তু পথ শেষ হলে হবে কি সৌন্দর্যের শেষ হবার উপায় নেই। কারন তখন আপনি চলে এসেছেন অপরূপা বিছানাকান্দিতে।
বিছানাকান্দি যাওয়ার পথে দেখা মেলবে পিয়াইন নদীতে পাথর বোঝাই নৌকা।
পা ফেলার সাথে সাথে এই ভাবনাটুকু কখন যে তলিয়ে যাবে বুঝতেই পারবেন না। পা রাখতেই টের পাওয়া যাবে কেন বিছানাকান্দিতে আসা। স্বচ্ছ আর হিমশীতল পানির নিচে যেন শত শত পাথরের মেলা বসেছে। নানা রঙের, নানা আকারের আর বিচিত্র সব পাথরে ভরপুর এই জায়গাটিকে পাথরের রাজ্য বললে ভুল হবে না। শুধু পা ভিজিয়ে ান্ত থাকেন না এখানে আসা মানুষগুলো। শরীর এলিয়ে দিয়ে যখন চোখ বুজে আসে তখন একে পাথর বিছানো বিছনাই মনে হবে। বর্ষার সময়টাতে পানিতে টইটুম্বুর থাকে বিছানাকান্দি আর তখন একে তুলনা করা যায় সবে কৈশোর ছেড়ে যৌবনে পা দেওয়া তরুনীর সাথে। অপরূপ চোখ জুড়ানো এক মোহনীয়তায় যেন আবিষ্ট করে রাখে এখানে আসা মানুষগুলোকে। তাই সময় করে ঘুরে আসতে পারেন স্বচছ জল আর পাথর পাহাড়ের বিছানাকান্দি। 
হাদারপাড় বাজারে অপেমান নৌযান যা আপনাকে নিয়ে যাবে বিছানাকান্দি।
সাবধানতা :
মেঘালয়ের পাহার থেকে বেয়ে আসা স্বচ্ছ পানির জলধারা আপনাকে কাছে টেনে নেবে তবে এখানে কোন সীমানা প্রাচীর না থাকায় আপনাকে বাংলাদেশের সীমানার মধ্য থেকেই সবকিছু উপভোগ করতে হবে। তবে হাটের দিন যদি আপনার ভ্রমণ হয় তাহলে খুব সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে এবং অবৈধ পণ্যবহন থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। 
বিছানাকান্দিতে ‘আমরা ঘুরি সারা বাংলাদেশ’ গ্র“পের সদস্যবৃন্দ। 
লেখক-
নাজমুল করিম ফারুক
সাধারণ সম্পাদক
তিতাস উপজেলা প্রেসকাব,
কড়িকান্দি বাজার, তিতাস, কুমিল্লা।

No comments:

Post a Comment