বাংলার অপূর্ব নিদর্শন নীলগিরি
নাজমুল করিম ফারুক
ছবি- অরূপ নীলগিরি পাহাড় ঘেরা মেঘের ভেলা
হ্যাঁ, পাহাড় ঝরনা আর মেঘের সাথে মিতালীর প্রবল ইচ্ছা থেকে সিদ্ধান্ত নিলাম এবারের ভ্রমণটা হবে বান্দরবানের নীলগিরি। অনেক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ১৪ নভেম্বর’১৫ বিকাল ৩টায় মাইক্রোবাস নিয়ে রওনা হলাম আমরা ঘুরি সারা বাংলাদেশ শিরোনামে ১০ সদস্যের একটি দল। চট্টগ্রামের এক রাত বিরতি দিয়ে ১৫ নভেম্বর বিকালে বান্দরবান জেলা শহরে গিয়ে অবস্থান করি এবং হোটেল প্যারাডাইসে রাত্রি যাপনের সিদ্ধান্ত হয়। রাতেই নীলগিরি যাওয়ার জন্য চাঁন্দের গাড়ি ভাড়া করা হয়। ভোর ৫টায় রওনা দিতে হবে তাই ঘুমাতে তারাও আছে। তারপরও রাত সাড়ে ১২টার আগে কেউ ঘুমাতে পারিনি।
ছবি- অরূপ নীলগিরি পাহাড় ঘেরা মেঘের ভেলা
কাক ডাকা ভোর। হোটেলের জানালে খুলে দেখা গেলো চারিদিকে কুয়াশায় আচ্ছান্ন। চাঁন্দের গাড়ি এসে হাজির, শুধু হাজির হয়নি আমরা। একে একে সবায়কে হোটেল থেকে বাহির করে যখন নিজে প্রস্তুতি নিতে ছিলাম তখন ফোন বাঁজছে তো বাঁজছে। তাড়াতাড়ি রওনা হলাম চাঁন্দের গাড়ি চড়ে। কনকনে শীত, ঠান্ডা হিমেল হাওয়া, প্রথমে কুয়াশা মনে হলেও চাঁন্দের গাড়ির ড্রাইভার মনের ভুল ভেঙ্গে দিয়ে বললো এগুলো মেঘ। অবাক করা দৃশ্য আর অনুভূতি।
ছবি- অরূপ নীলগিরি পাহাড় ঘেরা মেঘের ভেলা
মেঘের ভেতর দিয়ে আমরা শুধু উপড়ে উঠছি আর নামছি। উঠছি আর নামছি। বান্দরবান শহর থেকে যখন আমরা পাহাড়ি পথ ধরে নীলগিরি দিকে এগিয়ে যাচ্ছি তখনও পাহাড়ি জনপথে কোন পাহাড়ি জনগণ চোখে পড়েনি। মনে হচ্ছে একটু পড়ে ঘুম ভাঙ্গবে। হয়তো যার যার কাজে বাহির হবে। একদিকে বিস্তৃণ এলাকা জুড়ে মেঘের খেলা অন্যপাশে মনে হয় কত নীচে। ভয়ঙ্কর অনুভূতি। এক পাহাড়ি মহিলা তার কুঁড়ে ঘর থেকে বাহির হয়েছে কলার হানা নিয়ে বাজারে যাবে কিন্তু বিধিবাম, কত টাকা, দেন। গাড়িতে বেঁধে চলছে কলা খাওয়ার মহাউৎসব।
ছবি- এ পথটাই আপনাকে নিয়ে যাবে নীলগিরি
আঁকা বাঁকা পথ পেরিয়ে আমরা যখন চিম্বুক সেনা ক্যাম্পে হাজির কখন আমাদের সামনে হাজির হলো সকালের নাস্তা ভূনা খিচরি আর ডিম। অসাধারণ রান্না। নাস্তার পাশাপাশি চিম্বুক সূর্যদয়ে চলে ছবি তোলার প্রতিযোগিতা। পেছনে বিস্তৃণ এলাকা জুড়ে মেঘে ঢাকা। ভেসে আসছে শীতের কনকনে শীতল হাওয়া। সকালের নাস্তাটা সেরে রওনা হলাম আঁকা বাঁকা পাহাড়ি পথ ধরে নীলগিরি দিকে। পেটে যখন খানা পড়েছে মনে তখন আনন্দ এসেছে। গাইতে লাগলো পাঁচমিশালী গান। অসাধারণ অনুভূতি। কখন যাবো নীলগিরি। হই হুলুর আর গানে এক পর্যায়ে পৌছে গেলাম স্বপ্নের নীলগিরি।
ছবি- সত্যিই অসাধারণ এক নীলগিরি
দৌড়ে উপরে উঠলাম আর দেখলাম প্রাকৃতির লীলাখেলা। সত্যিই কি মেঘের উপরে আমরা! ঘুরা ঘুরি ছুটাছুটি আর ছবি তোলা। একটু বলে রাখি, সমুদ্র পিষ্ঠ হতে ২২০০ ফুট উচ্চতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত এ নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রটি পাহাড় এবং আকাশের মিতালীর এক অপূর্ব নিদর্শন। সকাল ও বিকালে মেঘের খেলা বিরাজ করলেও দুপুরে আকাশ পরিস্কার থাকলে এখান থেকে খালি চোখে বঙ্গোপসাগরে জাহাজ চলাচলের দৃশ্য উপভোগ করা যায়। মাথার উপরে সূর্য্য উকি দিচ্ছে আর মেঘেরা পালিয়ে যাচ্ছি। দেখলাম কিভাবে পাহাড় মেঘের বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। দু’ঘন্টা শেষ করে ফিরতে প্রস্তুতি নিলাম। সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত চায়ের দোকানে চা পান করে স্মৃতিস্বরূপ কিছু কেনাকাটা। চিম্বুক ও শৈলপ্রপাতের দর্শন নিয়ে চাঁন্দের গাড়ি চড়ে দুপুর ২টায় হাজির হলাম বান্দরবান শহরে।
লেখক,
সাংবাদিক ও ভ্রমণ লেখক
কড়িকান্দি বাজার, তিতাস, কুমিলা।
No comments:
Post a Comment