Thursday, August 19, 2021

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ : পর্ব-০১

 হৃদয়ে রক্তক্ষরণ : পর্ব-০১

নিগার,
শরৎ এসেছে। কাঁশবন এখনো সাদা মেঘের ভেলায় রূপ নেয়নি। কিন্তু মনটাতে বর্ষার কালো মেঘের ঘনঘটা। সত্যি বলতে কি! তোমাকে বিরক্ত করার বিন্দু মাত্র ইচ্ছা ছিল না। যতটা আঘাত বুকের ভেতরে জমা রেখে চলে গেছো, সেখান থেকে তোমার প্রতি কোন অক্ষর প্রকাশিত হবে তা আমার মনের ঘরে জমা নেই।
তবে তোমাকে মনে পড়ার একটা কারণ হলো- যখন তুমি স্বার্থপরের মতো চলে যাও, তখন কিছু দিকনির্দেশনা আমাকে দিয়ে ছিলে। আর বলে ছিলে, এগুলো কখনো করতে যেও না। তাহলে তুমি শুধু আঘাত পাবে, হয়তো সে আঘাত তোমাকে নিঃশেষ করে দিবে। তুমি অল্পতেই মানুষকে বিশ্বাস করো। যা কখনো ঠিক নয়; মনে রাখবে হাসির মাঝেও স্বার্থের ছায়া থাকতে পারে। তিনটি চাওয়ার মধ্যে একটি ছিল এরকম। আমি তোমার কাছে ওয়াদা করিনি তবে, ভেবে ছিলাম তোমার তিনটা চাওয়া আমি রক্ষা করবো। যেখানে তোমার নয়; আমার স্বার্থ ও ভবিষ্যৎ জড়িত।
নিগার,
স্বভাবে যে চোর। সে অনেক অভিনয় করতে পারে। ক্ষুধার অভিনয়। পেট ব্যাথার অভিনয়। মাথা ব্যাথার অভিনয়। অজ্ঞান হওয়ার অভিনয়। কথিত চোর যে অভিনয়ই করুক না কেন; তার উদ্দেশ্য থাকে একটাই কাঙ্খিত জিনিসটি চুরি করে হাতিয়ে নেয়া। আমরাও মানব জাতি কিছু অভিনয়কে এমনভাবে বিশ্বাস করে ফেলি; যখন নিজের কোন কিছু খোয়া যায় তখন বুঝি বিশ্বাসের ঘরে চুরি হয়েছে। একটা দীর্ঘ শ্বাস নেয়া-ফেলা ছাড়া কোন কিছু করার থাকে না। 
ছোট একটা গল্প শোন, আমার বন্ধু নিলয়ের বাড়ি কুয়াকাটা সাগর পাড়ে। ঝড়-তুফান আর জলচ্ছাসের মধ্যে বসবাস। অবসর সময় পেলে সে সাগরে মাছ ধরে। সম্প্রতি নিলয় তার এক বন্ধুর বৌদলতে রাজশাহী গিয়েছে আম কিনতে। সে নাকি আমের ব্যবসা করবে। এখন নিলয় অনলাইনে মালেয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, বাহরানে আম সরবরাহ করছেন। চিন্তা-চেতনা আর পোশাকে মনে হয় না; নিলয় সাগর পাড়ের ছেলে। আগে তার কার্যকলাপে তাকে আমি নেরুমাইন্ডের লোক বলে ক্ষ্যাপাতাম। সে রাগও করতো না। কারণ- তার মধ্যে নেরুমাইন্ডের উপাদানগুলো বিদ্যমান ছিল। আজ তার সাথে কথা হলো- কথা প্রসঙ্গে নিলয় আমাকে একটা উচিত শিক্ষাটা দিল। উল্টো নিলয় আজ আমাকে বললো- আমি এখন ভরাটমাইন্ডের লোকদের সাথে চলাফেরা করি। আমাকে নিরুমাইন্ডের লোক বলবি না! 
আসলে প্রতিউত্তরে নিলয়কে কিছু বলার নেই। আমি তাকে নেরুমাইন্ডের লোক হিসেবে জানতাম; আর তা নিলয় বিশ্বাস করতো বলে; সে আজ আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে, সে এখন নেরুমাইন্ড থেকে ভরাটমাইন্ডে উত্তীর্ণ হয়েছে। নিলয়ের ভাষ্য থেকে এটাই আমার বড় প্রাপ্তি কিংবা স্বার্থকতা- ‘সে যে নেরুমাইন্ডের লোক ছিল; সেটা আজও স্বীকার করলো। 
নিগার,
মনে মনে ভাবছো, এ গল্প শোনানোর জন্য আমার পেছনে এত সময় ব্যয় করার কি দরকার ছিল? ‘তার কি কোন খেয়ে-দেয়ে কাজ নেই?’। তোমার ভাবনাতে আমি দ্বিমত পোষণ করবো না। তবে এ গল্পের মধ্যে লুকিয়ে আছে অদৃশ্য একটি চরম সত্য উপলব্ধি। লেখাটা পড়ার পর রাতে যখন ঘুমতে যাবে, তখন মনে মনে চিঠি-টাকে স্মৃতিচারণ করতে চেষ্টা করো। তাহলে কিছুটা হলেও তোমার হিসাব মিলবে। আর যদি নাই হিসাব মিলে তাহলে বেশিক্ষণ সময় ব্যয় করো না। অন্য কাজে মন দিও। মন-শরীর দুটোই ভালো থাকবে। অন্য আরেকদিন না হয় অদৃশ্য চরম সত্যটা নিয়ে লিখবো।
ইতি,
যে নামে তুমি জানো...

No comments:

Post a Comment