সবুজ ঘাসের নিপুণ কার্পেট গুলিয়াখালী সী বীচ
নাজমুল করিম ফারুক
প্রচন্ড গরমে কোনো কিছুতেই মন বসছে না। হঠাৎ প্লান হলো সীতাকু- যাবো। দর্শনের তালিকা কর্ষতে গিয়ে সকালে মহামায়া লেক, দুপুরটা চন্দ্রনাথ পাহাড় আর বিকালটা কাটাবো দেশের সেরা সবুজ ঘাসের নিপুণ কার্পেট গুলিয়াখালী সী বীচে। এমনটা মাথায় নিয়ে কুমিল্লার তিতাস থেকে ভোর ৫টায় মাইক্রোবাসে রওনা দিলাম আমিসহ মনির মুন্সি, শাহআলম, শেখ ফরিদ, ইকবাল হোসেন, তাজুল ইসলাম, তোফাজ্জল হোসেন, মোশারফ হোসেন, শামীম হোসেন ও বিজয়।
সকাল সাড়ে ৯টায় মহামায়া লেক। ঘুরাঘুরি আর ছবি তোলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তারপর গাড়ি সোজা চন্দ্রনাথ পাহাড়; স্থানীয়দের ভাষায় সীতাকু- পাহাড়। চট্টগ্রাম জেলা শহরের সবচেয়ে উচুঁ পাহাড়টির উপরে অবস্থান চন্দ্রনাথ মন্দির। এ মন্দিরকে হিন্দুদের বড় তীর্থস্থান বলা হয়ে থাকে। সীতাকুন্ড বাজার থেকে ৪ কিলোমিটার পূর্বদিকে চন্দ্রনাথ পাহাড়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে চন্দ্রনাথ শৃঙ্গ প্রায় ১০২০ ফুট বা ৩১০ মিটার। পাহাড়ের পাদদেশে নবনির্মিত তোরনের সামনে গাড়ি রেখে পায়ে হেঁটে এক পথে পাহাড়ে উঠা; আরেক পথে পাহাড় থেকে নেমে আসার ইতিহাসটা যতটা না আনন্দদায়ক তার চেয়ে বেশি কষ্টের। প্রচন্ড গরম মাথা নিয়ে আমাদের মতো নাছোরবান্দা ছাড়া কেউ কি পাহাড় ট্রেকিংয়ে যায়? যাক, বিকাল ৩টার মধ্যেই সীতাকুন্ড বাজারে এসে দুপুরের খাবার শেষ করে গুলিয়াখালী সী বীচের দিকে রওনা দিলাম।
ছোট খালের একদিকে কেওড়ার বন, অপরদিকে সবুজ ঘাসের নিপুণ কার্পেট। পাহাড়ের ন্যয় ছোট ছোট টিলাগুলো সবুজ ঘাসের বিছানায় সজ্জিত বীচকে এতটা অনিন্দ্যসুন্দর করে তুলেছে নিজ চোখ না পড়লে কখনও অনুভুব করা যাবে না। চন্দ্রনাথ পাহাড়ের ক্লান্ত দেহটা ঝিরিঝিরি বাতাসে কখন দূর হয়ে গেলো টেরও পেলাম না।
এককথায়, সৈকতটির জীবপ্রকৃতির বৈচিত্রের অনিন্দ্যরূপের কারণেই সকলের কাছে প্রিয়। চারদিকে সবুজ আর সবুজ, মাথার ওপর বিশাল আকাশ, মাটিতে একপাশে কেওড়ার বন, তার মাঝ দিয়ে খাল, খালের এদিক-ওদিক চারদিকে ছড়িয়ে আছে কেওড়ার শ্বাসমূল, যেন আরেক ম্যানগ্রোভ বন। আর সামনে বিশাল জলরাশি। জোয়ার-ভাটার খেলা। সমুদ্র সৈকতের বালুভূমি আর চার পাশের মোহনীয় রূপে মোহবিষ্ট হচ্ছে দর্শনার্থীরা। সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে বীচটিতে দর্শনার্থীদের আনাগোনাই তার প্রমাণ মেলে। কি অপূর্ব দৃশ্য! সমুদ্রের জলে সূর্যের রক্তিম আভা। জল আর আকাশ মিলেছে সোনালি রঙের ক্যানভাসে।
যারা চট্টগ্রাম বা সীতাকুন্ড ঘুরতে যাবেন, বিকালে সময়টা রেখে দিবেন গুলিয়াখালী সী বীচের তালিকায়। সারাদিনের ক্লান্তিটা দূর করার এমন অনুভূতি আমি কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, কুয়াকাটা বা পতেঙ্গাতেও পায়নি। বিশ্বাস না হলেও সময় করে ঘুরে আসতে পারেন গুলিয়াখালী সী বীচে।
যাতায়াত :
দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুন্ড বাজারে নামতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি, অটোরিকশা নিয়ে যাওয়া যাবে গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকতে। স্থানীয়রা গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতকে মুরাদপুর বিচ নামে চেনেন। ভাড়া লাগবে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। রাস্তাটি সরু হলেও বর্তমানে সংস্কার করা হয়েছে। দিনের যে কোন সময় উভয় প্রান্ত থেকে সিএনজি অটোরিক্সা পাওয়া যায়।
থাকা ও খাওয়া :
গুলিয়াখালি সমুদ্র সৈকতের আশে-পাশে থাকা ও খাওয়ার কোনো ভাল ব্যবস্থা নেই। খেতে হলে সীতাকুন্ড বাজারে খেতে হবে। বাজারে মোটামুটি সব ধরনের খাবার পাওয়া যায়। বাজারেই রয়েছে সৌদিয়া আবাসিক হোটেল, গ্রীণ হোটেল, সাইমুনসহ কয়েকটি রেস্ট হাউজ।
লেখক,
নাজমুল করিম ফারুক
সভাপতি : তিতাস উপজেলা প্রেসক্লাব
কড়িকান্দি বাজার, তিতাস, কুমিল্লা।
মোবাইল ঃ ০১৮১৮-০০৪২৭২
No comments:
Post a Comment